বর্তমান যুগের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে শক্তিশালী মাধ্যম। মুহূর্তেই সারা বিশ্বের খবর যার যার কাছে পৌঁছে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাস্তবিক অর্থে প্রতিটি মানুষ এখন মোবাইল প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছে। দৈন্দনিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে পড়াশোনা খেলাধুলা ব্যবসায়িক লেনদেন নানান বিশ্বের ঘটনা ও নিত্যনতুন ডিভাইস প্রযুক্তির খবর সবকিছু জানা যায় এই মুঠোফোনের মাধ্যমে। সে মুঠোফোনের এখন শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ। বাংলাদেশের ৪০% লোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়।

আমরা তো চাইলেই পারি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে মানুষের মনের ইতিবাচক দিকগুলো প্রচার করতে। মানুষ মানুষের জন্য, মানুষ মানুষকে ভালবাসবে এরই নাম তো মানবতা কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানবতার কর্যক্রমের খবর খুবই নগন্য। তার বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মীয় নেগেটিভ ধারণা ও পর্ণো ভিডিও কেন্দ্র করে একশ্রেণীর অসৎ মানুষরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিশোর যুবককে বিপদে পরিচালিত করার জন্য লক্ষাধিক উপরে ধর্মীয় পেইজ বা গ্রুপ একচেটিয়া উন্মাদনা ছড়াচ্ছে। এবং সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বর্তমানে বেশিরভাগ সময় আমাদের কিশোর যুবকরা সেই সবে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে স্কুল-কলেজের কয়েকটি ঘটনা প্রমাণ করে যে তারা কিভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। শিক্ষককে হেনস্থা করতেও আজকাল যুগের ছাত্ররা দ্বিধা করছে না। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা ও পরিবেশ, সংস্কৃতিময় বাংলাদেশ চাইলে এখন থেকেই প্রত্যেক মানবিক মানুষকে মাঠে নেমে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আলোর বিপরীত যেমন অন্ধকার থাকে, অন্ধকারের বিপরীত আলো ও থাকে সে আলোর পথের যাত্রী হয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধকে সামনে রেখে ভার্চুয়াল মাধ্যমগুলোতেও শেখাতে হবে যে মানুষকে ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে বিচার না করে মানুষকে মানুষ হিসাবে দেখতে হবে। প্রত্যেক মা বাবা শিশুকাল থেকে সন্তানকে যেন সেই শিক্ষা দেয়। ধর্মান্ধ সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে নিজেকে মানবতার ফেরিওয়ালা হতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতো অসাম্প্রদায়িকতা আদর্শকে স্কুল কলেজ পর্যায়ে প্রচার করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ৩০ লক্ষ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছে একটি অসাম্প্রদায়িক মানবিক বাংলাদেশ পাওয়ার জন্য, দূর্ভাগ্য হলেও সত্যি, আজ আমরা সেখান থেকে বহুগুণ পিছিয়ে আছি।

তাই সেই লক্ষ্যে সকলে মিলে কাজ করতে হবে। তার একমাত্র প্লাটফর্ম হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম। সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো বলতে হবে। গাহি সাম্যের গান, “মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই নয় কিছু মহিয়ান” একটা মানবিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভালোবাসা সম্প্রীতি অসাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেয়ার কাজটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

লিখা : প্রতিমা দাশ